Powered By Blogger

Tuesday, July 1, 2008

say no to caste reservation.(bengali story)

। অ-সাধারণ ।
আমার একটা দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে অখিলেশ দাস আর সবার মত সাধারণ নয়; বরং অসাধারণ। বাকিরা আমার সাথে একমত হোক বা না হোক।

আমি, অখিলেশ আর রাজেশ-তিন বন্ধু। তিন বন্ধুর মধ্যে রাজেশ হল সবচাইতে লম্বা, ফর্সা; সুন্দর দেখতে; আবার বড়লোকের ছেলে; তাই স্বাভাবিক ভাবে, তিনজনের মধ্যে লোকের চোখ প্রথমে ওর ওপরই পড়ত। আমি মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে, আখিলেশও সেরকমই আনেকটা।
আমাদের সাথে রাজেশের চালচলনের কোনো মিল নেই। তবু আমরা বন্ধু। রাজেশ খেলাধূলায় যেমনি আসাধারণ; তেমনি পরাশুনায় তার জুড়ি মেলা ভার। প্রত্যকবার ফার্স্ট হয় ক্লাস থেকে।

অখিলেশ মধ্যবিত্ত হলেও অর ভাবনা-চিন্তা মধ্যবিত্ত নয়। ও সবসময় স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে; আরও, আরও ওপরে ওঠার স্বপ্ন। আমার দৃড় বিশ্বাস ছিল একদিন ও সবাইকে টপকে যাবে, সেদিন ও হবে সবার চোখে অসাধারণ।

এদের মধ্যে আমি হলাম ব্ল্যাক শীপ। কোনো কর্মেই অসাধারণত্ব লাভ করতে পারিনি। তবু সব কিছুই চেস্টা করার মধ্যে একটা তৃপ্তি লাভ করি।

ও! বলতেই ভুলে গেছি। অখিলেশকে অসাধারণ মনে করার কারণ ওর নামের বা পদবীর জন্য নয়; ওর কৃতীর জন্য, ওর কর্মের জন্য, ওর অন্তরের সত্য মানুষের জন্য; কারণ ওর মত মানুষের আজ পৃথিবীতে বড়ই অভাব।

দু-চারটে উদাহরণ দি।

রাজেশকে দাবায় কেউ কোনোদিন হারাতে পারে না। অখিলেশ পারে।

একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছি। হঠাৎ একজন হতদরিদ্র ভিখারী এসে হাত পাতল। আমি আর রাজেশ দেখেও দেখলাম না। আমাদের পকেটে তখন একশো-দুশো করে টাকা। অখিলেশ কিছুক্ষণ তার করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর পকেট থেকে দশ টাকার নোটটা বার করে দিয়ে দিল। আমরা বুঝতে বা জানতে পারিনি-সেদিন ওকে বাসে না উঠে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল।

আর সেদিন এক্তা অচেনা ছেলের ঘুড়ি পেড়ে দেবার জন্য অসীমবাবুর ছাঁদে উঠে গেল। ভাগ্যিশ অসীমবাবুর ভয়ানক কুকুরটা টের পায়নি।

কোনোরকম কাজে কোনোরকম সাহায্য দরকার পড়লে অখিলেশ সর্বদা সহাস্যে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত। আমরা অনেকেই ওকে দেখে অবাক হতাম। রাজেশের সাথে পাল্লা দিয়ে ও প্রত্যেকবার দ্বিতীয় হত। ফুতবল খেলাতেও রাজেশ যেদিন যেদিন আসত না; অখিলেশের দাক পড়ত; এমনিতে ও রোজ একই খেলা খেলতে পছন্দ করত না বলে রেগুলার টিমে চান্স পেতনা; অথবা নিতনা।

সেদিন যখন আমাদের উচ্চ-মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন হল; সেদিনকার ঘটনা আমাকে চিরকালের জন্য উদ্বেলিত করে গেল। আমরা সবাই নিজেদের ফর্ম খুব মন দিয়ে ভরতে ব্যস্ত; হঠাৎ খুব শোরগোল পড়ে গেল। মুখ তুলে ছেয়ে দেখলাম হেডমাস্টার অখিলেশের ফর্মটা হাতে নিয়ে খুব জোরে ধমক দিচ্ছে অখিলেশকে; তার লাল মুখ দেখে অনুমানেয় তিনি বেজায় চটেছেন যা খুব একটা হয় না-আর তাও আবার অখিলেশ! আর অখিলেশ; সে এক অদ্ভুত মুখ করে স্যারের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে।
স্যারের রাগ একটু ঠান্ডা হলে; অখিলেশ যে কথাটা বলেছিল তা আমি জীবনে ভুলতে পারবনা-
“আমি তো নিজেকে ‘এস সি’ মনে করিনা, স্যার, তাই আমি জেনেরালের পাশে টিক মেরেছি; কিছু ভুল করলাম কি স্যার?”

এরপর, ওকে সাধারণ বা জেনেরাল শ্রেনীতে রাখা হল।


আমি জানি ও এস সি লিখলেও যা; না লিখলেও তাই। ওকে মানুষ হিসেবে থামাবার ক্ষমতা কারুর নেই।
কিন্তু ও জেনেরাল নয়; ও অসাধারণ। সাধারণদের সাথে ওর তুলনা অমূলক।


আজ উচ্চ-মাধ্যমিকের রেসাল্টের দিন। আমরা সবাই চিন্তিত। রাজেশ পর্যন্ত ভয় কম্পমান। কিন্তু আমি জানি কার হৃদয় ভয়ের একটি কণাও প্রবেশ করতে পারেনি।

সে পারবে। সে জানে, আমি জানি; রাজেশ প্রকাশ করে না; তবু ও নিশ্চয়ই জানে; সে পারবে। হয়তবা ইশকুলের শেষ পরীক্ষায় ও রাজেশকে মাৎ দিয়ে দেবে; অথবা হয়ত জীবনের পরীক্ষায়। কিন্তু যখন যেভাবেই হোক; আমি জানি, সে পারবে।

-sabyasachi mitra 1/7/08 (best viewed in internet explorer)

THE BEST FILM EVER?